1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভবানীপুরের প্রচারে মন্দির-মসজিদ, সংকীর্তন, সমস্যার কথা নেই

গৌতম হোড়
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ভবানীপুরের উপনির্বাচন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রচার তুঙ্গে। কিন্তু সেই প্রচারে আসছে না মানুষের সমস্যার কথা।

https://p.dw.com/p/40RX9
ভবানীপুর থেকে বিধানসভার উপনির্বাচনে লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: AP Photo/picture alliance

ভবানীপুরের উপনির্বাচনে ত্রিমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি-র প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এবং সিপিএমের শ্রীজীব বিশ্বাসের। কংগ্রেস এখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তারা বামেদের প্রার্থীকে সমর্থনও করছে না।

তিন দলই পুরোদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। মমতা তো প্রায় রোজই নবান্ন থেকে ফেরার পথে ভবানীপুরে প্রচার করছেন। কখনো গুরুদ্বার, কখনো মন্দির বা মসজিদে যাচ্ছেন। তিনি সমানে বিজেপি-কে আক্রমণ করছেন। আগামী নির্বাচনে মোদীকে হারানোর কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন ধর্মস্থানে নিয়মিত যাচ্ছেন এবং নিজেকে তুলে ধরছেন মোদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে। মমতা বলেছেন, হিন্দুস্তান কখনই পাকিস্তান হবে না। আর তালেবান মানসিকতা থেকে তিনি দেশকে রক্ষা করবেন।

বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল মন্দিরে পুজো দিয়ে ধুনুচি নেচে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রচুর মানুষ সেখানে থাকায় নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নোটিশ পেয়েছেন। তারপর বলেছেন, দিনে তিনি একশ নোটিশ পান, দেড়শ পড়েন, দুইশ ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি সংকীর্তনে অংশ নিয়েছেন। খোল বাজিয়েছেন, গেয়েছেন। আর প্রশ্ন তুলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাকে কেন এত ভয় পাচ্ছেন? তিনি অবশ্য ভোট পরবর্তী সহিংসতার কথা তুলছেন।

জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে, পেট্রোল-ডিজেলের দাম একশ টাকার আশপাশে, করোনা ছড়াতে পারে এই ভয়ে লোকাল ট্রেন বন্ধ, স্কুল-কলেজ খোলেনি। করোনাকে কাবুতে আনা যায়নি। পার্শ্ব শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে, কয়েকজন বিষ পর্যন্ত খেয়েছিলেন। পুলিশে চাকরি পেয়েও জটিলতার জন্য অনেকে চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। রাজ্যে শিল্প নেই। ফলে চাকরির সুযোগ কমছে। এসব নিয়ে একমাত্র শ্রীজীব বিশ্বাস ছাড়া আর কেউ বিশেষ কথা বলছেন না। কিন্তু ভবানীপুরে তারা জিতবেন, এমন আশা অতি বড় বাম সমর্থক বা নেতাও করেন না। আর এখন সিপিএমের জনভিত্তি এতটাই দুর্বল যে, শ্রীজীবের কথা খুব একটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। প্রধান দুই দল সমস্যার কথা বলছে না।

শ্রীজীবের দাবি, তারা লোকসভার সময়ও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এখনো তুলছেন। তারা সমস্যার কথা তুলে যাবেন। ভোট না পেলেও প্রশ্নগুলো যে প্রাসঙ্গিক তা সকলে স্বীকার করবেন।

কেন নেই সমস্যার কথা

গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও দুই প্রধান দল তৃণমূল ও বিজেপি-র একই ধরনের প্রচার দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। এবার ভবানীপুরের উপনির্বাচনেও তাই হচ্ছে। প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বুদ্ধিজীবীদের ধারণা, ভোটে মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিয়ে ভাবছে। কিন্তু ভোটে অনেক সময় বা অধিকাংশ সময় দেখা গিয়েছে, এই ধারণা ঠিক নয়। তার বাইরে গিয়ে মানুষ চিন্তা করে।''

দীপ্তেন্দ্রর মতে, ''ভোটে অনেক সময়ই ভাষাগত, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক আইডেনটিটি বড় হয়ে ওঠে। যেমন, মমতা বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালি আইডেনটিটির তাস খেলেছেন এবং বিপুলভাবে জিতেছেন। মুসলিম ভোটদাতার কাছে ধর্মীয় আইডেনটিটির বিষয়টা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা বিজেপির বিরুদ্ধে ও তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই প্রথম কার্যত পুরো মুসলিম সম্প্রদায় মমতার পাশে এসেছেন। ফলে খাবার, পানীয়, বাসস্থানের বিষয়টি নিয়ে ভোটদাতারা প্রভাবিত হবেনই, এমন নয়।''

দুর্গা রূপে মমতা ব্যানার্জি এবং বিতর্ক

কিন্তু সাধারণত তো বিধানসভা উপনির্বাচনে স্থানীয় সমস্যা, ওই কেন্দ্রের সমস্যা প্রাধান্য পায়। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করেন, ''একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সেই কেন্দ্রের সমস্যা ও তার উন্নয়নের বিষয়টিই প্রধান হওয়া উচিত। রাজ্যের সমস্যার কথা উঠে আসা উচিত। তা না হয়ে এই যে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার যাওয়া প্রধান্য পাচ্ছে, মোদীর বিকল্প হয়ে ওঠার কথা বলে বাঙালির ভাবাবেগ উসকে দিতে চাওয়া হচ্ছে, এটা কাম্য নয়।''

শরদের মতে, ''নন্দীগ্রামেও মমতা চণ্ডীপাঠ করেছিলেন। এখানে ধর্মস্থানে যাচ্ছেন। বিজেপি-ও এটাই করে। তাদের সঙ্গে উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। এই বিষয়ে দিদি ও বিজেপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। উন্নয়ন ও সমস্যার প্রসঙ্গ না ওঠা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।''