1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রেনে কোভিড সংক্রমণ, মেট্রোয় নয়?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জুলাই ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ লোকাল ট্রেন৷ কয়েকটি স্টাফ স্পেশাল ট্রেন চলে৷ অফিস টাইমে তাতে গাদাগাদি ভিড়৷ যাত্রীদের চাপ কমাতে বাড়ানো হচ্ছে মেট্রো পরিষেবা৷ করোনা ঠেকাতে এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত কেন?

https://p.dw.com/p/3y86p
ছবি: Payel Samanta/DW

রেল কর্তৃপক্ষ লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি চেয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে৷ কিন্তু রাজ্য সরকার সংক্রমণে রাশ ধরে রাখতে লোকাল চালানোর অনুমতি দিচ্ছে না৷ অথচ মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে বিপরীত সিদ্ধান্ত৷ শহরের মানুষ মেট্রো পরিষেবা পাচ্ছেন৷ কিন্তু দূরের জেলার মানুষ লোকাল পাচ্ছেন না৷

গণ পরিবহনের ছবি

৫০ শতাংশ কর্মচারী নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলি খুলেছে৷ খুলে গিয়েছে দোকানপাট৷ যাত্রীর সংখ্যা কমায় ও পেট্রোলের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এখনই রাস্তায় বাস নামাতে নারাজ রাজ্যের বেশিরভাগ বাস সংগঠন৷ ফলে নিত্যদিন বিপাকে পড়ছেন শহরতলি থেকে কলকাতায় আসা মানুষরা৷ এই সুযোগে ট্যাক্সি ও অ্যাপ-ক্যাবগুলি বেশি ভাড়া নিচ্ছে৷ এই বৈষম্যে ৪ জুলাই বিজেপি নেতা তথাগত রায় টুইট করেছিলেন, ‘‘কলকাতা এবং শহরতলির অটোরিকশা ভিড়ে ঠাসাঠাসি হয়ে চলছে৷ যে যানবাহনে দুজন ওঠার কথা সেখানে ছজন উঠছেন৷ সেখান থেকে করোনা না ছড়ালেও কেবলমাত্র লোকাল ট্রেন ও মেট্রোই করোনা ছড়ায়, কেননা সেগুলি কেন্দ্র চালায়৷ এ ধরনের দ্বিচারিতা কেউ কি কখনো শুনেছেন?’’

নিম্ন মধ্যবিত্তদের লাইফলাইন হিসেবে লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখা একদমই অনাকাঙ্খিত: অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস

কিন্তু এখন মেট্রো চালু হলেও লোকাল বন্ধ৷ বরং সোমবার থেকে কলকাতার বুকে অফিস টাইমে দুটি মেট্রোর মধ্যে ব্যবধান কমে হচ্ছে ৬ মিনিট৷ মোট ১৫০টি মেট্রো যাতায়াত করবে নিউ গড়িয়া থেকে দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে৷ এবার কী বলবেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত? তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী ট্রেন চলা বা না চলা পুরো রেল মন্ত্রকের ব্যাপার৷ এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কোনো এক্তিয়ার নেই৷ রাজ্য পরামর্শ দিতে পারে৷ আমি জানি না কেন রেল মন্ত্রক এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলছে না৷ পুরো বিষয়টা অসঙ্গতিপূর্ণ, খামখেয়ালি৷’’

এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে মত পরিবহন বিশেষজ্ঞদের একাংশের৷ অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘‘সরকারের গণপরিবহনের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা নীতি নেওয়া ঠিক নয়৷ শহরাঞ্চলে পরিবহন চালু থাকবে আর শহরের বাইরে বন্ধ, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না৷ নিম্ন মধ্যবিত্তদের লাইফলাইন হিসেবে লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখা একদমই অনাকাঙ্খিত৷ এটা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত৷’’

সংক্রমণ  আটকাবে?

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই মুহূর্তে লোকাল ট্রেন চালু করলে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের ছবিটা হবে ভয়াবহ৷ বিরোধীদের প্রশ্ন, পানশালা, রেস্তোরাঁ, হোটেল, সুইমিং পুল, শপিং মল সবই খোলা, সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না? কিন্তু, লোকালের গাদাগাদি ভিড়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এ কথাও কি উড়িয়ে দেওয়া যায়? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তৃতীয় তরঙ্গের আগে অল্প সংখ্যক গণপরিবহন চালু করেছে সরকার৷ মানুষ নিরুপায় অবস্থায় বাদুড়ঝোলা হয়ে সফর করছে৷ এই ছবিটাই দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ছিল৷ এটা তৃতীয় তরঙ্গকে দ্রুত ডেকে আনতে পারে৷’’ মেট্রো সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘‘মেট্রোয় লোকালের মতো যত খুশি যাত্রী উঠে পড়ার ব্যাপারটা নেই৷ ভেস্টিবিউল কামরায় গোটা ট্রেন পরস্পর সংযুক্ত৷ একটি কামরায় ভিড় হলে অন্যটিতে সরে যাওয়ার সুযোগ আছে৷ লোকালে এ সুযোগ নেই৷ আবার লোকালে যতটা বাতাস চলাচল করে, মেট্রোর বদ্ধ অবস্থায় তা করে না৷ বদ্ধ পরিস্থিতি ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে সহায়ক৷’’

মেট্রোয় লোকালের মতো যত খুশি যাত্রী উঠে পড়ার ব্যাপারটা নেই: ডা. সুবর্ণ গোস্বামী

বঞ্চনার অন্য ছবি

লোকাল-মেট্রোয় দু-রকমের নীতিতে ধনী-নির্ধনের বিভেদের প্রশ্নও উঠছে৷ অধ্যাপক বিশ্বাস বলেন, ‘‘এটা সরকারের এলিটিস্ট সিদ্ধান্ত৷ মেট্রো চলে শুধু রাজ্যের রাজধানীতে৷ ভাড়ায় বিস্তর ফারাক৷ গরিব মানুষ কি তা হলে সফর করবেন না?” নিম্ন আয়ের মানুষদের কথাও ভাবা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিস৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের নীতি নির্ধারকেরা আগে উচ্চবিত্তদের কথা ভাবেন৷ তাই এই সিদ্ধান্ত৷ আদতে লোকাল ট্রেনই বেশি চালানো উচিত ছিল৷ তাহলে ভিড় কমানো যেতো, গরিবের পয়সা বাঁচতো৷’’