1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিপাকিস্তান

আহা রে পাকিস্তান!

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

হোটেলের সামনে অপেক্ষায় ছিল বাস৷ কিন্তু পিন্ডি স্টেডিয়ামে যাওয়ার সেই বাসে না উঠে নিউজিল্যান্ড দল জানিয়ে দিলো, স্টেডিয়ামে নয়, নিজের দেশে ফিরে যাবে তারা৷ বিনা মেঘে এত ভয়ঙ্কর বজ্রপাত!

https://p.dw.com/p/40UYf
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance

২০০৯ সালে লাহোরে সফররত শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি দীর্ঘদিন৷ অনেক দিন নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ‘হোম সিরিজ' খেলতে হয়েছে তাদের৷ সেখান থেকে ধাপে ধাপে এগিয়ে, সেই শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ, সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবোয়ের মতো দলকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পাকিস্তানে খেলতে দিয়ে, বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে নির্ঝঞ্জাটে পিসিএল আয়োজন করে পিসিবি প্রমাণ করছিল ক্রিকেটকে সন্ত্রাসীদের নাগালের বাইরে রাখতে তারা সক্ষম৷ দেশে যত ধরনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থাকুক, সন্ত্রাসী হামলায় দেশ জুড়ে যত মানুষই মারা যাক, ক্রিকেট মাঠকে যে কোনো ধরনের হামলা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্ষা করে এসেছে পাকিস্তান সরকার৷ 

বিদেশি সাহায্যনির্ভর পাকিস্তানের অর্থনীতি দুই দশক ধরে খুব খারাপের দিকে৷ ২০০৯ সালে ৮৩ পাকিস্তানি রুপিতে পাওয়া যেতো এক ডলার, ২০১৮-তে বিনিময় মূল্য হয়ে যায় ১২৫ রুপি আর ইমরান খানের আমলে গত তিন বছরে ব্যবধান দ্রুত বাড়তে বাড়তে এই মুহূর্তে হয়ে গেছে ১৬৯ রুপি৷ তবে পাকিস্তানের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক ইমরান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ফেরাতে যে সাধ্যের মধ্যে সব চেষ্টা করেছেন, তা মানতেই হবে৷

নিউজিল্যান্ড তিনটি ওয়ানডে ও পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরলে সে চেষ্টা আরো সার্থক হতো৷ কিন্তু শুক্রবার প্রথম ওয়ানডে শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলে পুরো সিরিজই বাতিল করে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড৷ পাকিস্তান জুড়ে তাই তীব্র হতাশা আর ক্ষোভ৷ ইমরান সরকারের কট্টর সমালোচকরাও বলছেন, এভাবে শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার প্রত্যক্ষ কোনো কারণ না জানিয়ে সিরিজ বাতিল করে খুব অন্যায় করেছে নিউজিল্যান্ড

শেষ মুহূর্তে কোনো কারণে ম্যাচ বা সিরিজ বাতিল হওয়ার দৃষ্টান্ত অনেক আছে ক্রীড়াঙ্গনে৷ কয়েকদিন আগেই করোনা আতঙ্কের কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টটি খেলেনি ভারত৷ ইসিবি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ জবাবে দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্কে চিড় ধরার শঙ্কা দূরে রাখতে, বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি এবং ক্রিকেটামোদীদের বঞ্চনার যন্ত্রণা কমাতে ইতিমধ্যে নতুন করে একটি টেস্টের সঙ্গে একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলারও প্রস্তাব রেখেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই৷

যত বড় বা যত অযৌক্তিক শঙ্কা থেকেই নিউজিল্যান্ড সিরিজ বাতিল করে থাকুক, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তাদের আছে৷ তাতে ভবিষ্যতে নতুন করে সিরিজ আয়োজনের সম্ভাবনা তো শেষ হয়ে যায়নি৷ এ মুহূর্তে দরকার দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা৷ আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের কোটি ক্রিকেটানুরাগীর নিজের দেশে ব্ল্যাক ক্যাপসদের ম্যাচ দেখার সুযোগ অচিরেই বেরিয়ে আসবে- এ আশা করা যেতেই পারে৷

তবে ক্রিকেট মাঠের বাইরে পাকিস্তান সরকারের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অবস্থান আরো স্পষ্ট এবং দৃঢ় হওয়াটাও এখন সময়ের দাবি৷ এ কথা পাকিস্তানের বিশ্লেষকরাও স্পষ্ট ভাষাতেই বলছেন, লিখছেন৷ আজও পাকিস্তানের ডন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে চোখ রাখলে দেখা যাবে  ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাপস ফোলি' শিরোনামের একটি বিশ্লেষণাত্মক লেখা৷

সেখানে ডন-এর রেসিডেন্ট এডিটর ফাহাদ হুসাইন এভাবে সফর বাতিল করার বিষয়টিকে দেখেছেন ‘স্পোর্টিং সিন', অর্থাৎ খেলাধুলার জন্য পাপ হিসেবে৷ এমন ‘পাপ' করায় নিউজিল্যান্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি৷

Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

তবে ফাহাদ হুসাইন লেখাটা শেষ করেছেন উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য তিনটি পরামর্শ দিয়ে৷ সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)' এবং ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)'-এর অতীত ও সাম্প্রতিক কিছু হামলা এবং তৎপরতার কথা৷ সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, দেশের সংবিধানকে স্বীকার করে কিছু শর্ত মেনে নিলে টিটিপি-কে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা যেতে পারে৷ ফাহাদ হুসাইন মনে করেন, যে টিটিপির হামলায় পাকিস্তানের মাটি বহুবার রক্তরঞ্জিত হয়েছে, সেই টিটিপি ক্ষমা চাওয়ার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা প্রকাশের আগেই তাদের ক্ষমা করতে চাওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ তিনি মনে করেন, এমন একটি জঙ্গি সংগঠনকে আদৌ ক্ষমা করা যায় কিনা তা নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরে মুক্ত আলোচনা দরকার৷ এমন ভয়ঙ্কর এক সংগঠনকে ক্ষমা করার ভালো-মন্দ দিকগুলো নিয়ে আলোচনার পর যদি মনে হয়, ক্ষমা ঘোষণা করা যেতে পারে, তাহলে তা-ই হবে৷ কিন্তু যদি সেরকম আলোচনা না হয়, তাহলে আগ বাড়িয়ে ক্ষমা করার বিশেষ আগ্রহ না দেখিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়াই হবে উত্তম৷