ই-কমার্স সাইটের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশে কী ব্যবস্থা রয়েছে

  • ফারহানা পারভীন
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
দেশের বহু মানুষ তাদের টাকা হারিয়েছেন প্রতারিত হয়ে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

দেশের বহু মানুষ তাদের টাকা হারিয়েছেন প্রতারিত হয়ে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড মনিটরিং বা নজরদারির কোন ব্যবস্থাই এখনও নেই।

"যে সব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ব্যবসা করবে তাদের মনিটর করার মত ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখনো তৈরি হয় নি" - বলছেন বাংলাদেশের ভোক্তাদের সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজির হোসেন।

তিনি বলছেন, সরকার একটা নীতিমালা তৈরি করেছে - কিন্তু অনলাইন ব্যবসা মনিটর করার কোন অবকাঠামো নেই।

সম্প্রতি ইভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ধরণের অফার এবং দ্রুত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেছিল।

কিন্তু এখন ইভ্যালির কর্ণধারদের নামে একাধিক মামলা হয়েছে, র‍্যাব গ্রেফতার করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের।

কিন্তু এই ধরণের ই-কমার্স সাইটের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে - এ প্রশ্ন নিয়েই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন শিএনর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তারা যদি কোন অভিযোগ পান তাহলে শাস্তি হিসেবে ঐ ই-কমার্স সাইটের সদস্য পদ বাতিল করেন।

"কিন্তু এতে তাদের ব্যবসায়ের কোন ক্ষতি হয় না" - বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:

"মেম্বারশিপ নেয়ার সময় তারা যে ডকুমেন্ট দেয় সেগুলো আমরা ভেরিফাই করে থাকি। তার বাইরে খুব বেশি যে মনিটরিং করার স্কোপ আছে তেমনটা না। যখন অভিযোগ আসে তখন সেটা ক্লারিফিকেশনের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এর বাইরে আমাদের তেমন ক্ষমতা নেই" - বলেন মি. শিপন।

ই-কমার্সের নামে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হওয়ায় গ্রাহকদের লোভ কমাতে জনস্বার্থে প্রচারণা চালানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট।

ব্যবসার নামে হাজার কোটি টাকা লোপাট

দেড় দশক আগে বিতর্কিত মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার নামে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল 'যুবক' নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতারণার অভিযোগে ২০০৬ সালে যুবকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার।

ডেসটিনি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছ থেকে ৪,০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জালিয়াতি করেছে - এই অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডেসটিনির শীর্ষ ব্যক্তিরা এখন কারাগারে।

ভোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজির হোসেন বলছেন, প্রচারণা চালালেও মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে এইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে অর্থ লগ্নি করে।

মনিটরিংএর ব্যবস্থা নেই

মি. হোসেন বলেন, "যে সব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ব্যবসা করবে তাদের মনিটর করার মত ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখনো তৈরি হয় নি। যদিও সরকার একটা নীতিমালা তৈরি করেছে - তবে বাংলাদেশে কোন অবকাঠামো বা ফরমালিটিস মেনটেইন করা করা হয় না অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে"।

বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহার করে লক্ষাধিক মানুষ ই-কমার্স ব্যবসা করছে

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহার করে লক্ষাধিক মানুষ ই-কমার্স ব্যবসা করছে

"আমরা ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারিনি। কারণ এখানে ভোক্তা যেমন আছে তেমন আছে উদ্যোক্তা। তারা কম দামে জিনিস কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে চেয়েছে। পুরোটাই লোভে পড়ে তারা এটা করেছে" - বলেন তিনি।

কিছু নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়

এ বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় - ডিজিটাল ব্যবসায় শৃঙ্খলা এনে ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধি ও নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নতুন কিছু নির্দেশনা জারি করে।

তার মাধ্যমে সরকার ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনার উদ্যোগ নেয়।

সেই নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিটি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানে একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ দিতে হবে - যিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে পারেন।

বাংলাদেশে ভোক্তারা কোন ভাবে প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করতে পারেন।

কিন্তু ই-কমার্স সাইটগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারি এই সংস্থাটি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে - তা জানার জন্য একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে চান নি।

অন্যান্য খবর: