বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখার অনুরোধ নাকচ করে দিল সরকার

গার্মেন্টস মালিকরা লকডাউনের কারণে তাদের ব্যবসায় বড় ক্ষতির আশংকা করছেন।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, গার্মেন্টস মালিকরা লকডাউনের কারণে তাদের ব্যবসায় বড় ক্ষতির আশংকা করছেন।

বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখার জন্য মালিকরা যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় সচিবালয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, লকডাউনের মধ্যে কারখানা খোলা রাখার জন্য শিল্প মালিকদের অনুরোধ তারা রাখতে পারছেন না।

"আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত এসেছে যে, এখন লকডাউন চলছে, ৫ই অগাষ্ট পর্যন্ত তা চলবে। যদিও আমাদের শিল্পপতিরা এবং অনেকেই কারখানা খোলার অনুরোধ করেছিলেন, আমরা সেই অনুরোধ গ্রহণ করতে পারছি না" বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সরকারের পক্ষ থেকে আবারও ঘোষণা করা হলো, ৫ই অগাষ্ট পর্যন্ত চলমান লকডাউনে গার্মেন্টসসহ সব শিল্পকারখানা বন্ধ রেখে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

সরকারের এমন অবস্থানে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র নেতারা।

তারা বলেছেন, তারা কারখানা খোলার তাদের দাবি পুনর্বিবেচনার করার জন্য আবারও সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবেন।

বিজিএমইএ সহ পোশাক খাতের মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন সরকারের কাছে লকডাউনের মধ্যেই পহেলা অগাষ্ট থেকে কারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।

তাদের বড় যুক্তি ছিল, বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী অগাষ্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে পণ্য সরবরাহ শুরু করা সম্ভব না হলে বড় সংকট সৃষ্টি হবে।

শিল্প কারখানার মালিকরা এই অনুরোধ জানিয়েছেন এমন এক সময় যখন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়েই চলেছে।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি বৈঠক হয়েছে। তাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং পুলিশ বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা অংশ নেন।

এই বৈঠকে চলমান লকডাউন এবং সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করে শিল্প মালিকদের কারখানা খোলার অনুরোধ নাকচ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, সংক্রমণ এবং মৃত্যু এখনও কমছে না। সেকারণে এমুহুর্তে জীবন রক্ষার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ৫ই অগাষ্ট পর্যন্ত লকডাউনে কোন ছাড় না দেয়া সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে ৫ই অগাষ্টের পর লকডাউন থাকবে নাকি শিথিল করা হবে-সে ব্যাপারে পরিস্কার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লকডাউনে কোন ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, লকডাউনে কোন ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টিতে তারা পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে, বিজিএমইএ'র সভাপতি মো: ফারুক হাসান বলেছেন, তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবারও সরকারকে অনুরোধ জানাবেন।

তিনি বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পণ্য সরবরাহের তাদের পুরোনো যুক্তিই আবার তুলেছেন।

আরও পড়ুন:

একইসাথে তিনি উল্লেখ করেছেন, কারখানা খোলা রেখে শ্রমিকদের টিকা দেয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এখন এসব যুক্তি নিয়েই তারা সরকারের সাথে আবারও আলোচনা করবেন।

৭ই অগাষ্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা

সরকারের উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে ৭ই অগাষ্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টিক দেয়া শুরু করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাসে মৃত্যু এবং সংক্রমণের লাগাম টানতে শুুধু লকডাউনের ওপর নির্ভর না করে টিকার কর্যক্রমও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ইউনিয়নে ইউনিয়নে টিকা দেয়ার কেন্দ্র করা হচ্ছে। ৭ই অগাষ্ট থেকে এসব কেন্দ্রে শুধু জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে গিয়ে টিকা দেয়া যাবে। আর এক্ষেত্রে ৫০ বছর থেকে বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।