আসাম ও মিজোরামের সীমান্ত-বিরোধ : কেন প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ভারতেরই দুটো অঙ্গরাজ্য

  • শুভজ্যোতি ঘোষ
  • বিবিসি বাংলা, দিল্লি
আসামের নাগাওন জেলায় পাহাড়া

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, আসাম-এর সাথে মিজোরামের ১৬৪ কিলোমিটার সীমান্ত আছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুটি রাজ্য, আসাম ও মিজোরামের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের জেরে আসাম পুলিশ বাহিনীর পাঁচজন সদস্য নিহত হওয়ার পর দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিরোধীদের প্রবল তোপের মুখে পড়েছে।

ওই সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই পরস্পরকে দোষারোপ করে বিবৃতি দিচ্ছেন - আর দেশের ভিতরে এই গৃহযুদ্ধ থামাতে না-পারায় দিল্লিতে বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগ দাবি করছে।

কিন্তু ভারতেরই দুটি অঙ্গরাজ্য কেন বছরের পর বছর ধরে এভাবে প্রাণঘাতী সীমান্ত বিরোধে লিপ্ত? আর কেনই বা তা থামানো সম্ভব হচ্ছে না?

১৯৭২ সালে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে একটা অংশ আলাদা করে নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিজোরাম সৃষ্টি করা হয়। ১৯৮৭তে পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদাও পায় মিজোরাম।

কিন্তু সেখানকার তিনটি জেলা - কোলাসিব, মামিত ও আইজলের সঙ্গে আসামের তিনটি দক্ষিণাঞ্চলীয় বাঙালি-প্রধান জেলা কাছাড়, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জের যে মোট প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত, তাকে কেন্দ্র করে দুই রাজ্যের মধ্যে বিরোধ গত প্রায় পঞ্চাশ বছরেও নিষ্পত্তি করা যায়নি।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা

ছবির উৎস, NurPhoto

ছবির ক্যাপশান, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা

সোমবার বিকেলে কোলাসিবের কাছে এই যে সংঘর্ষে আসাম পুলিশের সদস্যরা নিহত হয়েছেন, সেই ঘটনারও পরস্পরবিরোধী বিবরণ পাওয়া গেছে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।

মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা মঙ্গলবার বলেছেন, "আমাদের এলাকার ভেতরে জোর করে ঢুকে পড়ে আসাম পুলিশই প্রথমে গ্রেনেড ছুড়ে ও সাবমেশিনগান, রাইফেল দিয়ে ফায়ারিং শুরু করে।"

"পরে মিজোরামের জনতা ও পুলিশ মিলে তার প্রতিরোধ করলে সংঘর্ষে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আসামের কয়েকজন পুলিশ সদস্য মারা যান।"

"স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের দুজনকেই সংযত হতে বলেছেন, আর আসামও তাদের পুলিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।"

আসাম পুলিশের যে সদস্যরা সোমবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তারা হলেন সাব-ইনস্পেক্টর স্বপন রায় ও কনস্টেবল লিটন শুক্লবৈদ্য, এন হুসেইন, এম এইচ বড়ভুঁইঞা ও এস বড়ভুঁইঞা।

Skip Twitter post, 1
Twitter কনটেন্টের জন্য কি অনুমতি দেবেন?

এই নিবন্ধে Twitterএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Twitter কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে 'সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন' বেছে নিন।

End of Twitter post, 1

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আজ গুয়াহাটিতে বলেছেন, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।

তিনি আজ বলেন, "ফায়ারিংয়ের কথা শুনে ও আমাদের এসপি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন খবর পেয়েই আমি জোরামথাঙ্গাকে ফোন করি, উনি বারবার ক্ষমা চেয়ে নেন।"

"আমার লোকেরা সংঘর্ষে জীবন দিলেও তারা কিন্তু আসামের এক ইঞ্চি জমিও ছাড় দেননি, আমরা আসামের সীমানাকে সুরক্ষিত রেখেছি।"

কিন্তু যে ধরনের কথাবার্তা লাদাখের গালওয়ান বা প্যাংগং লেক সীমান্ত নিয়ে শোনা যায়, সেটা কেন ভারতেরই দুই মুখ্যমন্ত্রীর গলায়?

শিলচরের সাবেক এমপি ও সিনিয়র কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব বিবিসিকে বলছিলেন, "এক আসাম থেকেই তিন তিনটে রাজ্য নানা সময়ে আলাদা করে নেওয়া হয়েছে - মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়।"

কংগ্রেস নেত্রী ও শিলচরের সাবেক এমপি সুস্মিতা দেব

ছবির উৎস, Hindustan Times

ছবির ক্যাপশান, কংগ্রেস নেত্রী ও শিলচরের সাবেক এমপি সুস্মিতা দেব

"তো একটা রাজ্য থেকে তিনটে রাজ্য বের করা হলে ছোটখাটো কিছু সীমান্ত বিরোধ থাকতেই পারে, কংগ্রেস আমলেও সেটা ছিল।"

"কিন্তু সোমবার যে সংঘর্ষ হল, তার সূত্রপাত কিন্তু গত নভেম্বরেই। তখন সীমান্তের একটি স্কুলে মিজোরামের দিক থেকে দেশি বোমা ছোঁড়া হয়েছিল - দুই রাজ্যের সরকারের উচিত ছিল সেই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তখনই সেটার নিষ্পত্তি করা।"

"কিন্তু তা না-করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলে যাচ্ছেন রাজ্যের কোনও জমি দখল হয়নি। প্রশ্ন হল, জমি যদি দখল না-ই হয়েই থাকে তাহলে পুলিশের বড়কর্তারা বিরাট বাহিনী নিয়ে কাল রাতে কী করতে মিজোরাম গিয়েছিলেন?"

অন্যান্য খবর:

"আসলে চীন সীমান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী যেমন বলে যাচ্ছেন চীনারা আমাদের ভূখন্ডে ঢোকেনি, তেমনি এখানেও হিমন্ত বিশ্বশর্মা একই উপসর্গে ভুগছেন। সীমান্তে বিরোধ না-থাকলে গুলি চলল কেন?"

দুটো রাজ্যের সরকার মিলে যে এই পুরনো বিরোধের মীমাংসা করতে পারবে না, তা নিয়েও কোনও সংশয় নেই সুস্মিতা দেবের।

Skip Twitter post, 2
Twitter কনটেন্টের জন্য কি অনুমতি দেবেন?

এই নিবন্ধে Twitterএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Twitter কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে 'সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন' বেছে নিন।

End of Twitter post, 2

মিস দেবের কথায়, "দুটো রাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়ে বর্ডারে ধাক্কাধাক্কি করে, গুলি করে তো আর এর সমাধান কখনওই করতে পারবেন না। সেটা সম্ভব নয়।"

"এই সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানই করতে হবে। আর সেটা করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কেই, দুটো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে একসঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে।"

ঘটনাচক্রে শনিবার শিলংয়ে অমিত শাহর ডাকা বৈঠক থেকে ফেরার মাত্র দেড়দিনের মধ্যেই আসাম ও মিজোরাম পরস্পরের মধ্যে এই প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে - যা থেকে বোঝা যাচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও বিরোধ নিরসন হচ্ছে না।

আর সে কারণেই বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের মানুষে মানুষে ঘৃণা আর বিদ্বেষের বীজ বপন করছেন আর দেশকে তার পরিণাম ভুগতে হচ্ছে"।