গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার দায়ে সিঙ্গাপুরে এক নারীর ৩০ বছরের কারাদণ্ড
সিঙ্গাপুরে একজন গৃহকর্মীকে খাবার না দেওয়া, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে এক নারীকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গৃহকর্মী পিয়াং এনগাই মিয়ানমার থেকে সিঙ্গাপুরে কাজ করতে গিয়েছিলেন।
কয়েক মাস ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৬ সালে মৃত্যুর সময় তার ওজন ছিল মাত্র ২৪ কেজি।
গৃহকর্ত্রী গাইয়াথিরি মুরুগায়ান যেভাবে তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন সরকারি কৌসুলিরা তাকে "শয়তানের কাজ এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুর" বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম ধনী এই শহর ও দেশটিতে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়ে যেসব মামলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে এই ঘটনা তার একটি।
গৃহকর্ত্রী মুরুগায়ান একজন পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। বয়স ৪০। তিনি তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিচারক বলেছেন, ২৪ বছর বয়সী ওই গৃহকর্মীর ওপর কতোটা নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে, কিভাবে অপমান করা হয়েছে, দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয়েছে- সরকারি কৌসুলিরা তার একটি "মর্মান্তিক" চিত্র তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে এধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের যতো ঘটনা ঘটেছে এটি তার একটি এবং অল্পবয়সী ওই নারীর মৃত্যুর আগে তার ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন।
বিচারের সময় আদালতে বলা হয় যে মিস মুরুগায়ান ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ওই গৃহকর্মীর উপর নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। এর অল্প কিছু দিন আগে পিয়াং এনগাই সিঙ্গাপুরে গিয়ে পৌঁছান। বিদেশে এটাই তার প্রথম চাকরি।
বাড়িতে লাগানো সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে তার ওপর কিভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। কখনও কখনও দিনে তাকে কয়েকবার মারধর করা হয়েছে।
গৃহকর্ত্রী মিস মুরুগায়ান গরম ইস্ত্রি দিয়ে তার শরীরও পুড়িয়ে দিয়েছেন।
আরো পড়তে পারেন:
আদালতে বলা হয়েছে গৃহকর্মী মিস পিয়াংকে যেসব খাবার দেওয়া হতো তার মধ্যে ছিল পানিতে ভেজানো রুটি, ফ্রিজের ঠাণ্ডা বাসি খাবার অথবা সামান্য কিছু ভাত। মাত্র চৌদ্দ মাসে তার ওজন ১৫ কেজি কমে গিয়েছিল।
পিয়াং এনগাই ২০১৬ সালের জুলাই মাসে মারা যান। এর আগে মিস মুরুগায়ান ও তার মা মিলে গৃহকর্মীকে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেছেন বলে আদালতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরে ময়না তদন্ত রিপোর্টে দেখা গেছে মিস পিয়াং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।
মিস মুরুগায়ানের আইনজীবীরা চাইছিলেন তাকে ৮/৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হোক। আদালতের কাছে তাদের যুক্তি ছিল যে তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন এবং তার কিছু মানসিক সমস্যাও ছিল।
তার স্বামী- যাকে পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে- এবং তার মায়ের বিরুদ্ধেও এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে প্রায় আড়াই লাখ বিদেশি গৃহকর্মী কাজ করেন যাদের বেশিরভাগই গেছেন ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং ফিলিপিন থেকে।
দেশটিতে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা খুবই সাধারণ ঘটনা। এর আগে ২০১৭ সালে ফিলিপিন থেকে কাজ করতে যাওয়া এক গৃহকর্মীকে ঠিক মতো খেতে না দেওয়ার দায়ে এক দম্পতিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে মিয়ানমারের এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে আরো একটি দম্পতিকেও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।