পশ্চিমবঙ্গে 'মুসলিম বিদ্বেষ' আর ঢাকায় 'ভিপি নূর ভীতি' নিয়ে প্রশ্ন, সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকের কথা

  • সাবির মুস্তাফা
  • সম্পাদক, বিবিসি নিউজ বাংলা
শিল্পীর চোখে একজন শ্রমিক।
ছবির ক্যাপশান, সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের কঠিন জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

এ'সপ্তাহে নানা বিষয়ে চিঠি এসেছে, যেমন পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম হওয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের গেস্ট হাউসে রুম দিতে অস্বীকৃতি, ডাকসুর প্রাক্তন ভিপিকে নিয়ে বিতর্ক, মেয়েদের পোশাক, ইসরায়েলকে আরব দেশের স্বীকৃতি ইত্যাদি।

তবে আজ শুরু করছি সিঙ্গাপুরে একজন বাংলাদেশি অভিবাসীর কথা দিয়ে। করোনা ভাইরাসের কারণে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি অভিবাসীরা যে কঠিন জীবন যাপন করছেন, তার উপরে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন দেখে জনৈক অভিবাসী লিখেছেন। তবে তিনি তার নাম-পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন:

''আমি সিঙ্গাপুরে কাজ করি ছয় বছর ধরে। সিঙ্গাপুর নিয়ে আমার কোন কষ্ট ছিল না। কারণ, যে ভাবেই থাকি বা খাই না কেন, ভাল একটা বেতন পাই এখানে। তাই থাকা আর খাওয়ার কষ্ট করতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে, আপনারা আমাদের নিয়ে সত্য তুলে ধরেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। ''আজ ১৪ দিন হয় আমি কোয়ারান্টিনে আছি। থাকার জায়গা খুব ভাল। এখানে তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু খাবারের মান অনেক খারাপ ছিল।

''আমাদের সব প্রবাসীদের মনের ভিতর অনেক কষ্ট । কেউ কিছু বলে না ভয়ে, যদি দেশে পাঠিয়ে দেয়, জেলে দেয়, জরিমানা করে? তাহলে তো কেউ এইসব শ্রমিকদের সাহায্য করবে না, আল্লাহ ছাড়া। মালয়েশিয়ার রায়হান এর মত যদি হয়? তাহলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না। আর আমাদের ডরমিটরিতে দুই জন গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এই লকডাউনের মধ্যে। এই রকম আরো অনেক জায়গায় হয়েছে।''

পরিস্থিতি এত কঠিন তা জেনে খুবই কষ্ট পেলাম। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আপনার জীবনও আবার সহনীয় হয়ে উঠবে।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের মুসলিম বলে রুম দিতে অস্বীকৃতি জানায় গেস্ট হাউস, কলকাতা, ২১-০৯-২০২০।

ছবির উৎস, AFP

ছবির ক্যাপশান, বৈষম্যের শিকার: যে মাদ্রাসা শিক্ষকদের মুসলিম বলে রুম দিতে অস্বীকৃতি জানায় গেস্ট হাউস।

এবারে আসি ভারত প্রসঙ্গে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষককে গেস্ট হাউস থেকে বের করে দেয়া নিয়ে যে প্রতিবেদন সোমবার রেডিওতে প্রচার করা হয়, সে বিষয়ে কয়েকজন লিখেছেন। প্রথমে মানিকগঞ্জ থেকে অরবিন্দ রায়:

''সম্প্রতি কলকাতার কাছে সল্ট লেকের একটি আবাসিকে মাদ্রাসার শিক্ষকদের পূর্ব নির্ধারিত বুকিং বাতিল করে দিয়ে অপমানজনক ভাবে বের করে দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। ভারত, মিয়ানমার, চীন, শ্রীলঙ্কা এবং ইউরোপ, আমেরিকা সহ পশ্চিমা অধিকাংশ দেশেই মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগ জনক। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এর কারণ কী? কেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি মুসলিম সমাজের বের করতে হবে? কেন তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে? নাকি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে মুসলিম সমাজের উপর উসকানিমূলক হামলা হচ্ছে?''

বিষয়টি খুব জটিল না মি. রায়। জাতিগত বা ধর্মগত বিদ্বেষ সব সময়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। কিন্তু এই ঘৃণার জন্য দোষ দেয়া হয় ঐ ভুক্তভোগী জাতিকে এবং তাদেরকেই বলা হয় নিজেদেরকে বদলাতে। আপনি হয়তবা জানবেন, ইউরোপে এক সময় ইহুদীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হত এবং এই ঘৃণার জন্য তাদের ঘাড়েই দোষ চাপানো হত। শত শত বছর ধরে ইউরোপে ইহুদীরা নির্যাতিত হয়। এই জাতিগত ঘৃণার চূড়ান্ত পরিণতি আমরা দেখতে পাই ১৯৪০-এর দশকে যখন নাৎসি জার্মানি ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করে। কাজেই বর্তমানে ভারতে যে মুসলিম বিদ্বেষ দেখা যাচ্ছে তার জন্য মুসলিমদের জবাবদিহি করতে না বলে, যারা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেই জনমত গড়ে তোলা উচিত বলে আমার মনে হয়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অভিযোগপত্র, যার ভিত্তিতে তিন জন গ্রেপ্তার।

ছবির উৎস, মইদুল ইসলাম

ছবির ক্যাপশান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অভিযোগপত্র, যার ভিত্তিতে তিন জন গ্রেপ্তার।

পরের চিঠি লিখেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে মোহাম্মদ রেজাউল রহিম:

''সেপ্টেম্বরের তেইশ তারিখে বিবিসি বাংলা ওয়েবসাইটে ''শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে হোটেল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের " শিরোনামের খবরটি অন্য অনেকের মত আমাকে বেশ মর্মাহত করেছে। খবরে যেমনটা জানা গেল, রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরে সরকারি কাজেই নিয়োজিত ছিলেন বিতাড়িত শিক্ষকেরা। কেবলমাত্র মুসলমান হওয়ার অজুহাতে পাড়ার লোকেরা শিক্ষকদের থাকতে দিতে চায় না, নাকি ভারতের বর্তমান সরকার হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোরেই সাম্প্রদায়িক উস্কানির বার্তা দিতে চাইছে?''

সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ ইত্যাদি সব সমাজেই কম বেশি আছে মি. রহিম। তফাৎ হচ্ছে, বেশির ভাগ রাষ্ট্র এ'ধরণের নেতিবাচক মানসিকতাকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি এবং আইনের মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করে। ভারতেও এক সময় সেরকমই ছিল। কিন্তু প্রেক্ষাপট পালটে যাচ্ছে এবং মুসলিম-বিদ্বেষ আগের থেকে অনেক বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মুসলিমদের নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা দিতে সরকারের যে ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন সেটা কি তারা করছে?

সরস্বতী পূজা শেষে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেয়া হচ্ছে, ০২-০২-২০২০।

ছবির উৎস, NurPhoto

ছবির ক্যাপশান, বুড়িগঙ্গায় সরস্বতী: বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় কি হুমকির মুখে?

এই বিষয়ে আরো লিখেছেন কুমিল্লার লাকসাম থেকে জিতেন্দ্র কুমার মজুমদার, তবে তিনি বাংলাদেশে হিন্দু বিদ্বেষের কথাও উল্লেখ করেছেন:

''ভারতের কলকাতা শহরের কাছে কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষককে গেস্ট হাউসে থাকার অনুমতি না দেয়ার খবরে আমি লজ্জিত এবং এর তীব্র নিন্দা জানাই। ভারতে এটা কোন ভাবে আশা করিনি। বাংলাদেশে সরকারের কঠোর অসাম্প্রদায়িক নীতির কারণে আমরা সবাই শান্তিতে আছি, কিন্তু তারপরও সমাজের কিছু বখাটে লোক অপকর্ম করে যাচ্ছে যে নিউজ বিবিসিতে দেওয়া অত্যাবশ্যক।

''যেমন, গত কয়েকদিন আগে সাভারে এক হিন্দু স্কুল ছাত্রীকে এক মুসলিম যুবক প্রেমের প্রস্তাব দিলে মেয়েটি তা অস্বীকার করে। ফলে, প্রকাশ্য দিবালোকে ছেলেটি ছুরিকাঘাতে মেয়েটিকে হত্যা করে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাণ্ড করতে সাহস না পায়। বাংলাদেশ আবহমানকাল থেকে অসাম্প্রদায়িক দেশ, এখানে আমরা হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যুগের পর যুগ এক সাথে বসবাস করছি, কিন্তু কিছু লোক সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে।''

আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত যে এ'ধরণের নৃশংস হত্যাকাণ্ডর বিচার যেন অবশ্যই হয়, এবং আমি যতটুকু জানি পুলিশ ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে। অতীতে আমরা দেখেছি, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা সম্পর্কে বিচ্ছেদ হলে পুরুষ চরম প্রতিশোধ নেয় নারীর ওপর - ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, খুন। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এই হত্যাকাণ্ড সেরকম একটি নৃশংস ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে, কিছু সংগঠন ঘটনাকে 'লাভ জিহাদ' অর্থাৎ বিয়ের মাধ্যমে হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তর করার ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, এই 'লাভ জিহাদ' ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একটি সাম্প্রদায়িক তত্ত্ব। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রেম এবং পারিবারিক সম্পর্ক প্রতিরোধ করাই এই তত্ত্ব প্রচারের উদ্দেশ্য। যাই হোক, ঘটনা প্রবাহর দিকে আমরা খেয়াল রাখছি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাহেম বেগিনের সাথে আনোয়ার সাদাত, ০৬-০৯-১৯৭৮।

ছবির উৎস, Consolidated News Pictures

ছবির ক্যাপশান, ঐতিহাসিক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাহেম বেগিনের সাথে আনোয়ার সাদাত

এবারে যাই ভিন্ন প্রসঙ্গে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবার বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নাজনীন আক্তার:

''গত ২০ সেপ্টেম্বর ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ড নিয়ে। ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্বটি আমি আগেও শুনেছি। তবে বর্তমান সময়ে ইসরায়েলের এর সাথে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন করা এবং ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের আদৌ কোন সম্পর্ক হতে পারে কি না তা নিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনগুলো আমি শুনেছি। সবকিছু শুনে বুঝতে পারলাম ১৯৭৭ সালের দিকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল কতখানি দুঃসাহসিক একটা কাজ। বিবিসি বাংলাকে ধন্যবাদ এই পর্বটি এমন দারুণ একটা সময়ে আবার প্রচার করার জন্য। নইলে বুঝতেই পারতাম না আনোয়ার সাদাত কত বড় শান্তির দূত ছিলেন।''

আপনি ঠিকই বলেছেন মিস আক্তার, যে ১৯৭৭ সালে ইসরায়েলের সাথে শান্তি স্থাপন মিশরের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। তার চার বছর পরেই আনোয়ার সাদাত নিজ সেনাবাহিনীর সদস্যর গুলিতে নিহত হন। হয়তো ইসরায়েলের সাথে শান্তি স্থাপনের কারণেরই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

তালেবানের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন শাজিয়া হায়া

ছবির উৎস, Lyse Doucet

ছবির ক্যাপশান, তালেবানের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন শাজিয়া হায়া

আরেকটি জটিল শান্তি আলোচনা এখন আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী আর দেশের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মধ্যে শুরু হয়েছে। তারই সূত্র ধরে আমাদের একটি প্রতিবেদন নিয়ে লিখেছেন চট্টগ্রাম থেকে মহি উদ্দিন:

''আপনারা তালেবানের সাথে আফগান সরকারের শান্তি আলোচনা সম্পর্কিত বিবিসি পশতু'র শাজিয়া হায়া নামে এক রিপোর্টারের একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। ঐ প্রতিবেদনের শুরুর দিকে রিপোর্টার "জঙ্গি" বলতে কী তালেবানদের বুঝিয়েছে? যদি সত্যি তালেবানরা জঙ্গি হয় সেটা কোন যুক্তিতে? তা জানতে চাই। বিবিসি বা বিবিসি পশতু কি আমেরিকান গণমাধ্যমগুলোর সহকারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে? কারণ যারা দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত আমেরিকানদের কাছে জঙ্গি ছিল তারা আজ শান্তি আলোচনায় আসার সুবাদে সেই তকমা হারিয়েছে। তারা আজ সাধারণ মানুষ বা দল।''

না মি. মহি উদ্দিন, বিবিসি পশতু মার্কিন গণমাধ্যমের সহকারী হিসেবে কাজ করে না। আর 'জঙ্গি' শব্দটি ছিল ইংরেজি militant শব্দর সরাসরি অনুবাদ। পুরো প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। তালেবান যে অর্থে জঙ্গি, তা হল তারা সশস্ত্র সংগঠন যাদের একটি উগ্রপন্থী মতাদর্শ রয়েছে। আমেরিকানদের সাথে শান্তি আলোচনার সুবাদে না, তালেবান তাদের 'তকমা' হারাবে তখনি, যখন তারা আফগানিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে নিয়মতান্ত্রিক, সাংবিধানিক পথে রাজনীতিতে যোগ দেবে।

ছেলের বলে ব্যাট করছেন মা ঝর্ণা আক্তার।

ছবির উৎস, ফিরোজ আহমেদ/দি ডেইলি স্টার

ছবির ক্যাপশান, ছেলের বলে ব্যাট করছেন মা ঝর্ণা আক্তার।

সম্প্রতি একজন মা বোরকা পরা অবস্থায় তার ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলার ছবি সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে, নারীর পোশাক নিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচনা সৃষ্টি হয়। সে বিষয়েই লিখেছেন খুলনার, পাইকগাছা থেকে আরিফুল ইসলাম:

''বহু পুরনো কাল থেকে বাঙালি মেয়েদের শাড়ি অত্যন্ত প্রিয় পোশাক ছিল । কিন্তু বেশ কয়েক বছর দেখা যাচ্ছে শাড়ির প্রচলন সীমিত হয়ে এসেছে । আমারা যেন পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে চলে যাচ্ছি, ইভ টিজিং ও ধর্ষণের হারও আগের চাইতে বেড়ে গেছে, মূলত মেয়েদের পোশাকের কারণে । অন্যদিকে সমাজে যে সব মেয়েরা ভালো পোশাক পরিধান করলে ভালো দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়, তা নিয়ে আবার অনেকে বাজে মন্তব্যও করেন যার ফলে তারা মানসিক ভাবে চিন্তায় পড়েন।''

আমাকে একটু বিপদেই ফেললেন মি. ইসলাম, কারণ আপনার বক্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত পুরুষতান্ত্রিক এবং আপত্তিকর মনে হচ্ছে। ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমি দু:খিত, কিন্তু এ'ধরণের মানসিকতা ধর্ষকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। নারীর পোশাক নয়, ধর্ষণের জন্য দায়ী পুরুষের হীন মানসিকতা। সেই মানসিকতার পরিবর্তন হলে সকল নারী, সে প্যান্ট-সার্টই পরুক বা নিকাব-বোরকাই পরুক, তারা নিরাপদ থাকবেন।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকলেও নুরুল হক সবচেয়ে পরিচিতি পান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
ছবির ক্যাপশান, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকলেও নুরুল হক সবচেয়ে পরিচিতি পান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

এ'সপ্তাহের সব চেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হচ্ছেন নুরুল হক। তাকে নিয়ে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান:

''ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর এখন সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ডাকসু নির্বাচনের আগে অনেকেই তাকে চিনতো না। নূরকে জনপ্রিয় করার জন্য তার উপর প্রতিপক্ষের মামলা হামলাই যথেষ্ট। নূরকে যারা চিনতো না, জীবনেও নাম শোনেনি, তারাও এখন নূরকে চিনে। ভিন্নমত প্রকাশ করাই তাকে লক্ষ্যবস্তু করার প্রধানতম কারণ। অথচ ভিন্নমত প্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ।

''ছাত্র নেতাদের পিছনের ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখা যাবে, যার বিরুদ্ধে যত বেশি মামলা, হামলা ও নির্যাতন হয়েছে, ভিন্নমত ও মুক্তবুদ্ধি চর্চায় বাধা দেওয়া হয়েছে, সে তত বিখ্যাত হয়েছে। আমার প্রশ্ন, সরকার যদি নুরুল হক নূরকে নিয়ে বিচলিত নাই হয়, তবে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা কেন?''

সব মামলাই যে সরকারের নির্দেশে হচ্ছে তা কিন্তু আমি বলবো না মি. রহমান। এসব ঘটনার পেছনে অনেক স্থানীয় উপাদানও কাজ করে। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন যে, নুরুল হককে যতই বাধা দেয়া হচ্ছে বা তার উপর আক্রমণ হচ্ছে, তার জনপ্রিয়তা এবং তরুণদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ততই বাড়ছে। আশা করতে হবে, তার বিরুদ্ধে যে দুটো মামলা সম্প্রতি হয়েছে, সেগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।

নুরুল হক নূরের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে মামলা-হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করে, ২২-০৯-২০২০।

ছবির উৎস, NurPhoto

ছবির ক্যাপশান, নুরুল হক নূরের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে মামলা-হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করে।

একই বিষয়ে লিখেছেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে মোহাম্মদ আব্দুল মাতিন:

''গত ২১ শে সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নূরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়, তারপর ঐ রাতেই সাধারণ ছাত্র পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নূরকে গ্রেফতার করা হয়, গ্রেফতার করার ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানে প্রথমত গ্রেপ্তারের সময় গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পরবর্তীতে বলা হয়েছে তারা বিক্ষোভ করা ও পুলিশের উপর হামলা করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক ঘণ্টার ভিতরে দু'রকম মতামত কারণ কী?''

সব কিছু এক সাথে ঘটে যাওয়ায় কেউ হয়তো দুটি বিষয় গুলিয়ে ফেলেছে মি. মাতিন। আসল কথা হল, ধর্ষণ মামলায় কাওকেই গ্রেফতার করা হয়নি। সেদিন নুরুল হককে পুলিশের কাজ ব্যাহত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণ মামলায় কেউ গ্রেফতার হলে তাকে এত সহজে ছেড়ে দেয়া হয় না।

১৮ই মার্চের পর থেকে স্কুলগুলোয় আর আগের মতো কোন ক্লাস পরীক্ষা চলছে না।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, স্কুল যখন খুলবে তখন টিউশন ফি নিয়ে 'উভয়সংকট' তৈরি হতে পারে।

করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবক যে সংকটে পড়েছেন, তা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন রংপুরের কাউনিয়া থেকে বিলকিস আক্তার:

''স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে উভয়সংকট তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বকেয়াসহ পুরো টিউশন ফি এক সঙ্গে পরিশোধ করার জন্য অভিভাবকদের ওপর চাপ দিচ্ছে। আবার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না।

''আমার প্রস্তাব হল, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগামী কয়েক মাস চলার সামর্থ্য আছে, তাদের উচিত অভিভাবকদের জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া। সে ক্ষেত্রে কিস্তিতে ফি নেওয়া এবং অতি দরিদ্র অভিভাবকের জন্য ফি মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যেসব অভিভাবকের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁদের উচিত বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ফি পরিশোধ করে দেওয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখানে সমঝোতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।''

ভাল প্রস্তাব দিয়েছেন মিস আক্তার। তবে এখানে অভিভাবকদের মাঝে জটিলতা এমনকি তিক্ততা সৃষ্টি হতে পারে কি? বিশেষ করে, অনেক অভিভাবক ভাবতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হচ্ছে। অন্য একটা উপায় হতে পারে হয়তো, যদি আগামী দু'তিন বছরের জন্য সকল বেসরকারি স্কুল সরকারি অনুদানের আওতায় নিয়ে আসা যায়। কিন্তু তখন স্কুল কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এখানে যেহেতু হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ জড়িত তাই আমি ধরে নিতে পারি সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে।

ভিডিওর ক্যাপশান, স্মৃতিশক্তি কেন হারায়? মনে রাখার ৯টি সহজ উপায়

ছোট একটি অভিযোগ করে লিখেছেন পঞ্চগড়ের বোদা থেকে রতন রঞ্জন রায়:

''হঠাৎ সন্ধ্যার অধিবেশনে শুনলাম বিশ্বে কোভিড আক্রান্ত সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়াল। শুনে হোঁচট খেলাম,ভাবলাম ভুল শুনলাম না কি? কিন্তু না, রাতের অধিবেশনে আবার একই খবর শুনলাম। টিভির পর্দা অন করে দেখি আক্রান্ত সংখ্যা ৩ কোটি ছাড়াল। কোথায় ৩০ লক্ষ আর কোথায় ৩ কোটি। ভুলটা আমার নাকি আপনাদের?''

আপনার ভুল হবে কেন মি. রায়, আপনি তো খবরটি দেন নি, শুনেছেন মাত্র। ভুলটা আমাদেরই। তিরিশ মিলিয়নের বাংলা হবে তিন কোটি। কিন্তু ভুলক্রমে মিলিয়নকে লক্ষ হিসেব করে তিরিশ লক্ষ বলা হয়েছে। এই ভুলের জন্য আমরা দু:খিত এবং লজ্জিত।

সাম্প্রতিক সময়ে একজন গাড়িচালক নিয়ে অনেক কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা হয়েছে। তবে বিষয়টি আরো গুরুত্বের সাথে দেখে লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক:

''আমরা জানি, 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল' এই প্রবচন বহুল প্রচলিত। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক আব্দুল মালেক যেন প্রবচনটিকে নতুন অর্থ প্রদান করেছেন। জনসাধারণের মৌলিক প্রয়োজনের এই খাতে লুকিয়ে আছে আরও ভয়ংকর চিত্র। পূর্ণ চিত্র পেতে হলে মালেকের মতো গাড়ি চালকদেরও আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। বস্তুত নেপথ্য খলনায়কদের শনাক্ত, আটক ও উপযুক্ত শাস্তি ছাড়া মালেকদের শাস্তি কেবল 'কসমেটিক সার্জারি' হিসেবেই বিবেচিত হবে আমার কাছে। তবে, মালেকদের আটক করা যতটা সহজ, তার নেপথ্য সহযোগীদের আটক করা ততটাই কঠিন। আমার আশংকা, রাজনৈতিক রং ও অর্থনৈতিক শক্তির কারণে কেউ যদি পার পেয়ে যায়, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলা যাবে না।''

সঠিক কথাই বলেছেন মি. ইসলাম। একটি মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক তখনি এত ক্ষমতাধর হবে যখন দুর্নীতি তার উপরে নিচে এবং আশে পাশে ছড়িয়ে থাকবে। আব্দুল মালেকের গল্প স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা সম্পর্কে একটি আভাস দিচ্ছে মাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে, বিষয়টির গভীরে যাবার সাহস এবং দক্ষতা কি দুর্নীতি দমন কমিশনের আছে?

ঢাকার পুলিশ হাসপাতালের আইসিইউ, ১৯-০৯-২০২০।

ছবির উৎস, SOPA Images

ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতিতে জর্জরিত বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে।

একই বিষয়ে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার:

''একজন গাড়ি চালকের কোটিপতি হয়ে ওঠার গল্পটি অনুমান করা কারো পক্ষেই অসম্ভব নয়। নিয়োগ এবং বদলির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দিয়ে এই গাড়ি চালক প্রতিটি ক্ষত্রে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলেই অনেকে মনে করছেন। কেবল গাড়ি চালকের সম্পদের হিসাব নিলেই চলবে না, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদেরও হিসাব নিতে হবে এবং এ সম্পদের উৎস কোথায় সেটিও খতিয়ে দেখা সরকারের উচিৎ বলেই মনে হয়।''

সবাই সেই আশায় আছে মি. সরদার, এই গাড়ি চালকের সূত্র ধরে বা তার জবানবন্দির ভিত্তিতে গভীর তদন্ত চালিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের দুর্নীতির চালকদের ধরা হবে। দেখা যাক।

পেঁয়াজ প্রসঙ্গে এখনো বেশ ঝাঁজ রয়েছে। সে বিষয়ে লিখেছেন রাজবাড়ী সদর থেকে শাওন হোসাইন:

''সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে বিধায় বাংলাদেশে পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রশ্নটি হচ্ছে ভারতের উপর কেন আমাদের পিঁয়াজের বাজার নির্ভর করে থাকবে? যেহেতু আমাদের চাহিদার তুলনায় পিঁয়াজের উৎপাদন অনেক কম, তাই ভারতের সমালোচনা করার থেকে পিঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের মনোযোগী হওয়া বেশি দরকার।''

আপনি ঠিকই বলেছেন মি. হোসাইন, পেঁয়াজ যেহেতু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শস্য তাই বাংলাদেশের উচিত নিজের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো। অথবা, আমদানির জন্য কয়েকটি দেশের সাথে চুক্তি করা যাতে একটি দেশের ওপর নির্ভর করতে না হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে ভারত যত পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি করতে পারে, অন্য দেশগুলো সেটা পারবে কি না।

এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:

ওবায়েদুল ইসলাম উজ্জ্বল, সংযুক্ত আরব আমিরাত।

মোহাম্মদ হাসিব হাওলাদার, ঢাকা।

দীপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।

শাহিন তালুকদার, মৌকরন, পটুয়াখালী।

এমদাদুল হক বাদশা, দক্ষিণ বনশ্রী, ঢাকা।

মোহাম্মদ বেলাল, মালয়েশিয়া।

চন্দন কুমার শর্মা, বোদা,পঞ্চগড়।

দেব প্রসাদ রায়, রংপুর।

মোহাম্মদ লিয়াকত আলী, দোলাপাড়া উপশহর রংপুর।

নাজমুল হক,বরিশাল।

মোহাম্মদ ফাতিউর রহমান রাকিব, দূর্গাপুর, রাজশাহী।

দশরত শীল, বোদা, পঞ্চগড়।

মোহাম্মদ মাসুদ রানা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

মাকামে মাহমুদ চৌধুরী, সৈয়দপুর, নীলফামারী।